"পয়লা বৈশাখ"- পঞ্চম শ্রেণী থেকে পঞ্চাশোর্ধ্ব
- NM84 Members
- Apr 15, 2021
- 2 min read
সুদেষ্ণা চট্টরাজ
বাঙালিয়ানা যাদের মজ্জায়, "১ লা বৈশাখ" তাদের কাছে একটা উল্লেখযোগ্য দিন। এক বিশেষ অনুভূতি। আবালবৃদ্ধবনিতা-- কেউ উদাসীন থাকতে পারে না, ভুলে যায় না এই দিনটা। গ্রীষ্মের দাবদাহ থাকে ঠিকই তবু যেন একটি সুন্দর দিন আনন্দে কাটানোর আশা করে প্রত্যেক বাঙালি। বসন্তের দখিনা বাতাস, নানা রঙের ফুল, সুবাস বয়ে নিয়ে আসে জুঁই, বেল আরো কত কি বাঙালির মনে। শিমুল পলাশের রং এর রেশ তখনও থাকে চরাচরে, মানুষের মনেও।
ছোটবেলার কথা বলতে গেলে মনে হয় পয়লা বৈশাখের কিছু আগে থেকেই চলত প্রস্তুতি, নানা রকমের। তখন আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারে, নতুন জামা-কাপড় হত বছরে দু'বার - পূজোয় আর পয়লা বৈশাখে। নতুন বর্ষ উদযাপন করি আমরা নতুন বস্ত্রে। গরমের উপযুক্ত জামাকাপড় হতো এই সময়। কাপড় কিনে দর্জির কাছে সেলাই করতে দেওয়ার প্রচলন ছিল। কোনও কোনও সময় মা নিজেও বানিয়ে দিতেন।
আর চলতো ফাংশনের রিহার্সাল। আমাদের বাড়ির নিচে ছিল "ছন্দম" গানের স্কুল। সেই প্রতিষ্ঠানে পয়লা বৈশাখ হতো অনুষ্ঠান। খুব উৎসাহ সহকারে আমরা তার প্রস্তুতি নিতাম। গান, নাচ, গিটার, তবলা, নৃত্যনাট্য - সে ভারি আনন্দের দিন ছিল।
একটা ধারণা ছিল ছোটবেলায় মনের মধ্যে - যে পয়লা বৈশাখের দিনটা যেমন কাটবে, সারা বছর দিনগুলো সেই ভাবেই কাটবে। তাই খুব চেষ্টা করতাম সবকিছু ভালোভাবে করতে - যাতে মা-বাবার কাছে বকুনি না খাই, বন্ধুদের সাথে ঝগড়া না হয়, পড়াশোনাটা ঠিক করে করতাম, তা না হলে সারা বছর তো ঠিক করে লেখাপড়া হবে না (ভয় ছিল)। ছেলে মানুষের মন আর কি!
সকাল পেরিয়ে দুপুর তারপর বিকেলের অপেক্ষায় থাকতাম। কারণটা আমাদের সমকালীনরা নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছে। হ্যাঁ ঠিক, বাবার সাথে বিভিন্ন দোকানে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যাওয়ার আনন্দ। তখন ওটাই চল ছিল। যেসব দোকানে সারাবছর যাওয়া-আসা লেগে থাকত, তাদের দোকান থেকে নিমন্ত্রণ আসতো। ঐদিন মিষ্টি, শরবত দিয়ে আপ্যায়ন এর সাথে সাথে ক্যালেন্ডার আর মিষ্টির প্যাকেট ও জুটতো। কি আনন্দ, কি আনন্দ! এখনকার ছেলে মেয়েরা কি বুঝবে সেটার মর্ম?
যখন কলেজ বা ইউনিভার্সিটি তে পড়াশোনা করেছি তখন পয়লা বৈশাখের অনুভূতি কিন্তু বদলে গেছে। আর তো বাবার সাথে দোকানে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যাওয়া যায় না, আগ্রহটাও হারিয়ে যায় কেন জানিনা। মায়ের সাথে হয়তো একটু বেরোনো, মেয়ে তো। আমাদের সময় মেয়েদের একটু বড় হবার পর, সীমাবদ্ধ হয়ে যেত অনেক কিছুই। তাই বেশিরভাগ সময় ছুটির দিনগুলো বাড়িতে মায়ের সাথেই কাটতো, না হলে আত্মীয়-স্বজনের সাথে।
এই পঞ্চাশোর্ধ্বে পৌঁছে পয়লা বৈশাখের অনুভূতি? যখন সন্তান কাছে থাকে আনন্দ, পড়াশোনার জন্য বা কর্মসূত্রে দূরে থাকলে নিরানন্দ বা গতানুগতিক। পয়লা বৈশাখের আনন্দটাও সংসার আর সন্তান কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। অবশ্যই এটা একান্ত আমার অনুভূতি, মিশিয়ে ফেলো না যেন।
"বন্ধু"দের সাথে থাকলে প্রত্যেকটা উৎসবের অন্য মাহাত্ম্য। কেন জানো? সন্তান ছোট থেকে বড় হয়, মা-বাবার বয়স বেড়ে যায়-- আশা প্রত্যাশার হেরফের। বন্ধুদের বয়স কিন্তু সেই এক জায়গায় থেমে থাকে-- তাই চির নবীন, চির নূতন থাকতে চাই বন্ধুদের সাথে। পয়লা বৈশাখ বন্ধুরা সব একসাথে হাতে হাত ধরে থাকলেই তো হয়। তাহলে আবার সেই গন্ধরাজ, জুঁই, বেল ফুলের গন্ধে সুবাসিত হবে মন, কানে রিন রিন করে বেজে উঠবে --"এসো হে বৈশাখ এসো এসো" --তালে তালে পা মেলাবো আমরা বন্ধু রা।

Comments