top of page

একটি সত্যি কাহিনী (মিথ্যে হতেও পারে) (অনিন্দ্য রক্ষিত)

আমি সুবল পাল, বাড়ি পুরুলিয়া। চাকরি করি হাওড়া স্স্টোর্স এ রেলের অফিস এ। বাবাও চাকরি করতো, আমাকেও রেলে ঢুকিয়ে দিয়েছে। এখন বাবা রিটায়ার করেছে। খুব সাধারণ ফ্যামিলি আমাদের। এক বোন ছিল, বিয়ে হয়ে গেছে।

রেলের পাস পাই। মাঝে একবার পুরী গেছিলাম, দার্জিলিংয়ে ও গেছি। আর বিশেষ কোথাও যাওয়া হয়নি। কলকাতায় একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে আছি। নিজেই রান্না করি। এই আর কি! খুব সাদামাটা লাইফ আমার।


অফিসে বসে লেজার মিলাচ্ছিলাম। হঠাৎ পিয়ন সুনীল টা এসে বলল – “পাল দা, বড় বাবু ডাকছে”

এই মরেছে, বড়বাবু মানেই তো বকুনি আর দাঁত খিচুনি। এমনিতেই আজ শরীরটা ভালো নেই। বড় অম্বল করেছে সকালে বেগুনি খেয়ে। ভয়ে ভয়ে দরজায় নক করলাম।

“আসবো স্যার”

“কেন আসবে কি জন্য আসবে ছুটি হবে না এখন। খুব চাপ।“

আরে কি ঝামেলা! আগে দেখবি তো! তা না, সারাক্ষণ ট্যাঁ ট্যাঁ করছে!

“স্যার আমি পাল, সুনীল বলল আপনি ডাকছেন!”

“তোমায় ডেকেছি কেন বলতো”

কান চুলকে বললাম “আমি মানে স্যার ইয়ে ঠিক জানি না তো”

আমার দিকে কেমন একটা রাগ রাগ করে ভাল্লুকের মত তাকিয়ে রইল। আর আমিও পড়া না পারা ছাত্রের মত দাঁড়িয়ে!

“ওহহ মনে পড়েছে। একটা খুব ইম্পরট্যান্ট কাজ। তোমায় দিল্লি যেতে হবে ২৫ তারিখএ। একটা ফাইল রেল বোর্ডে দিয়ে আসতে হবে। মিত্তির যায়, ও ছুটিতে। পারবে তো! ট্রেনের টিকিট করে নাও!”

যাক বাবা বকেনি! হাফ ছেড়ে বাঁচলাম!

“সকালে যাবে, ফাইলটা দেবে, বিকেলের ট্রেনে ফেরত আসবে। “

“ওকে স্যার!”

বাইরে এসে এজেন্টকে ফোন করলাম। না, কোন ট্রেনে টিকিট নেই যাবার। আসারটা পেয়ে যাব।

“স্যার কোন ট্রেনের টিকিট নেই। ফেরারটা আছে, আর পাশ এর কোটা সব ফুল!”

“আরে না গেলে আসবে কি করে! গাধা একটা! এবার কি হবে! ফাইলটা তো পৌঁছতে হবে। ওকে, নো প্রবলেম, তুমি ফ্লাইটে যাও! আমি বিল পাস করে দেব! তবে হ্যাঁ, কাউকে বলবে না ফ্লাইটে যাচ্ছ! তোমার পেটে তো কথা থাকে না।“

পড়েই যাচ্ছিলাম! এরোপ্লেন! এরোপ্লেন!! আমার স্বপ্ন, প্লেনে উঠবো! উফ!! ভাবতেই পারছি না! তাও আবার দিল্লি, ভারতের রাজধানী!

“কি হলো পারবে তো?”

“ইয়েস স্যার!”

“যাও টিকিট কেটে নাও!”

বাইরে এসেই সুনীলকে বললাম “এক গ্লাস জল দে তো!”

এক গ্লাস খেয়েই বললাম “আরো এক গ্লাস দে।“ ও অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল “এই পালদা, বস ক্লাস নিয়েছে নাকি? এত ঘামছো কেন? শরীর ঠিক আছে তো!” ওকে কি করে বলি! আমি তো উত্তেজনায় ছটফট করছি!

“না না। ঠিক আছে, তুই যা!”

আমার স্বপ্ন – এরোপ্লেন। সেই ছোটবেলায় দেখতাম কত উপর দিয়ে যাচ্ছে, আর চলে গেলে দুটো সাদা সাদা লাইন আকাশে থাকতো! পাড়ায় বিশুদা বলেছিল ওটা নাকি এরোপ্লেনের রাস্তা। আমাদের রাস্তায় যেমন কালো পিচ দেওয়া তেমনি নাকি আকাশে সাদা পিচ দিয়ে বানানো। তুলো দিয়ে তৈরি তাই আকাশে ভেসে থাকে। কে জানে বাবা হবে হয়তো! সাইন্স নিয়ে তো পড়িনি!

এজেন্ট টিকিট করে দিল! ২৫ তারিখ, মানে সোমবার সকাল সাতটায়! বসকে বলে এলাম। বললো, শুক্রবার এসে ফাইল নিয়ে যেতে, আর বলল সব কিছু ভালো করে বলে দেবে।

তাড়াতাড়ি হাফ ডে সি-এল নিয়ে টিকিট নিয়ে বাড়ি এলাম। অদ্ভুত লাগছে। প্লেনে উঠবো। টিকিটটাকে বারবার দেখছি! ঝুম্পা এয়ারলাইনস! নাম লেখা সুবল পাল।

আসার সময় ডিম টোস্ট খেয়ে এসেছি। খিদেও পাচ্ছে না। টিকেটটা বার দশেক দেখার পর টেবিলে রেখে ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পড়লাম।

পাড়াতে চেনা জানা সবাইকে বলা হয়ে গেল যে আমি এরোপ্লেনে দিল্লি যাচ্ছি। মুদীর দোকান, চায়ের দোকান সবাইকে। “জানিস তো অফিসের কি চাপ! আর আমি তো দারুন কাজ করি। তাই বস আমায় দিল্লি পাঠাচ্ছে। ট্রেনে যেতে পারতাম কিন্তু বস বলল না পাল না, তুমি এরোপ্লেনেই যাও!”

“তাই নাকি দাদা? মিষ্টি খাওয়াতে হবে কিন্তু।“ “আরে হবে হবে, আগে দাড়া ঘুরে আসি।“

রাতে কিছুতেই ঘুম আসলো না দু-তিন দিন। শুক্রবার এসে গেল। বসের কাছে গেলাম ফাইল আনতে।

“স্যার আসবো?”

“এসো পাল এসো, বসো। তোমায় ফাইলটা দিয়ে দিই। আর, ফ্লাইটে গেছো কখনো?”

“না স্যার!”

“শোনো আমি গাইডলাইন দিয়ে দিচ্ছি, সেই ভাবেই যাবে। প্রথমেই বলি তাড়াতাড়ি যাবে, না হলে সিট পাবে না - দাঁড়িয়ে যেতে হবে। জানলা দিয়ে হাত বের করবে না একদম, বাজপাখি কামড়ে দেবে। একটা গামছা বা নারকোল দড়ি দিয়ে নিয়ে যাবে কাঠের চেয়ার তো তাই জানলার গ্রিলের সাথে চেয়ারের হ্যান্ডেল বেঁধে নেবে! উপরে খুব হাওয়া - প্লেন দুলবে, পড়ে যেও না আবার! আর মোস্ট ইম্পোর্টেন্ট, ইংরেজিতে কথা বলবে! বুঝলে! ও আর একটা কথা ভালো জামা কাপড় পড়ে, জ্যাকেট নিয়ে, পায়ে বুট জুতো পড়বে। উপরে খুব ঠান্ডা! সারাক্ষণ তো চপ্পল পড়ে ফটাস ফটাস কর!”

আনন্দের বেলুনটা ফুস হয়ে গেল - আমি তো ইংরেজিতে কথা বলতে পারি না। চেয়ারে বসে খুব চিন্তা করছি, অমনি সুনীল এল - খুব স্মার্ট আর স্টাইলিশ – “কিগো পাল দা, ধুম মেরে আছো কেন? বস রগড়েছে নাকি? লিকার চা দেব নাকি?”

“আরে ধুর ওসব কিছু না। এই তোর কাছে ভালো বুট জুতো আছে? তোর পায়ের সাইজ তো আমার মতই।“

“কি ব্যাপার বলতো দাদা? কেস জন্ডিস মনে হচ্ছে!”

“শোন কাউকে বলিস না - আমি এরোপ্লেনে সোমবার দিল্লি যাচ্ছি। আমার তো বুট জুতো নেই!”

“আচ্ছা আচ্ছা। পুজোয় কেনা একটা একদম নতুন জুতো আছে। অফিসের পর তোমায় দিয়ে আসবো।“

বুট জুতো তো হল - কিন্তু ইংরেজিটার কি হবে? অফিসের পর কলেজ স্ট্রিটে গিয়ে একটা স্পোকেন ইংলিশের বই কিনে ঘরে এলাম। মাকে ফোন করে বলে দিলাম। একটা ভালো টি শার্ট আর জিন এর প্যান্ট বের করে রাখলাম। ইস্ত্রী করব। কিন্তু সুনীলের জুতোটা একটু টাইট হচ্ছে। ব্যাটা নতুন মোজাও দিয়ে গেছে। যাক গিয়ে। একদিনের ব্যাপার তো, ঠিক চালিয়ে নেব। আর জ্যাকেট বের করলাম একটা, দার্জিলিং থেকে কিনেছিলাম। কিন্তু কি আরশোলার গন্ধ! যাক গিয়ে কাল রোদ্দুরে দিয়ে দেবো। পাড়ার দোকানে বলে এলাম, বলল রোববার রাতেই বেশ তেল দিয়ে চপচপে পরোটা আর ডিম তরকারি বানিয়ে দেবে। এরোপ্লেনে গিয়ে বললেই নাকি গরম করে দেবে। আমি এই দিকে স্পোকেন ইংলিশ মুখস্থ করতে বসলাম।

এবার এসে গেল সেই মহেন্দ্রক্ষণ! সন্ধ্যা থেকেই ছটফট ছটফট! কোনরকমে খিচুড়ি খেলাম! একটা টিফিন বক্সে পরোটা আর তরকারি নিয়েছি! খুব টেনশন হচ্ছে। বারবার টিকিট দেখছি। জ্যাকেটটা নিয়েছি একটা ব্যাগে। বুদ্ধি করে একটা উলের টুপি নিয়েছি, যদি বেশি ঠান্ডা লাগে। লাস্ট টাইম দার্জিলিং এ গিয়ে খুব ঠান্ডা লাগছিল। কিন্তু টেনশন কাটাই কিকরে? বুকটা থেকে থেকে খালি হয়ে যাচ্ছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। বারবার জল খাচ্ছি আর বাথরুম যাচ্ছি।

যাই হোক আমি ভোর তিনটের মধ্যেই জামা জুতো পরে রেডি। চারটের সময় অটো বলে রেখেছি। ঘড়ি দেখছি বারবার আর জানলায় দাঁড়িয়ে দেখছি অটো ব্যাটা এলো কিনা। কোথায় কি? নেড়ি কুকুরগুলো দেখি ঘুরছে আর ঘেউ ঘেউ করছে। তিনটে ৪৫ নাগাদ অটো টা চলে এলো।

“কটায় ফ্লাইট দাদা?”

“সাতটায়।“

ও কেমন অবাক হয়ে চেয়ে রইলো। যা ইচ্ছে ভাবুক গিয়ে, জয় দুর্গা বলে উঠে পড়লাম অটোতে। ওমা, এয়ারপোর্ট অবদি যেতেই দিল না। তার আগেই আটকে দিল। বললো এর আগে অটো যাবে না। কি আর করা? ব্যাগ নিয়ে হেঁটে হেঁটে এয়ারপোর্ট গেটে পৌঁছলাম। জুতোটা ছোট, কি পায়ে লাগছে রে বাবা! খোঁড়াতে খোঁড়াতে গেট অব্দি পৌঁছাতেই একটা লম্বা টাইপের পুলিশ খটাস করে আমায় স্যালুট করল। আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ওকেও একটা খটাস করে স্যালুট করে যেই ভিতরে ঢুকতে যাবো, অমনি বলে “টিকিট আর আইডি প্লিজ!” ওহো, আমায় স্যালুট করেনি। আমার পাশ দিয়ে ওর বড়বাবু যাচ্ছিল ওকে স্যালুট করেছে। গেট দিয়ে ঢুকে ঝুম্পা এয়ারলাইন্স খুঁজে গেলাম কাউন্টারে। ফাকা, কেউ আসেনি। দেখি একটা সুন্দর করে মেয়ে বসে আছে। আমি টিকিট দিতেই বললো “গুড মর্নিং স্যার, টু আর্লি! হুইচ সিট স্যার? উইণ্ডো অর আইল?”

গুড মর্নিং আর উইন্ডো বুঝলাম, বললাম “উইন্ডো উইন্ডো। হোয়াট প্লাটফর্ম? হোয়াট প্লাটফর্ম?”

“নো প্লাটফর্ম স্যার, ইটস নট ট্রেন স্যার, ইটস প্লেন। দ্যাট দা গেট, এইট নম্বর, গো স্ট্রেট, সিকিউরিটি গেট, দেন ইউ উইল গেট ডিফারেন্ট গেটস। ওকে স্যার, হ্যাপি জারনি!”

কি ভদ্র আর কি অমায়িক। ঝরঝর করে ইংরেজি বলছে। যাইহোক ওই গেটের দিকেই গেলাম। আমার আগে একটা লোক ছিল। সে দেখি সবকিছু একটা প্লাস্টিকের গামলাতে রাখলো, তারপর একটা মেশিনের মধ্যে দিল। তারপর একটা মেশিনের মধ্যে দিয়ে গিয়ে একটা পুলিশের কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই ও একটা কি মেশিন দিয়ে গা হাত পা ঘষতে আরম্ভ করল। কি করছে রে বাবা? ম্যাসেজ করছে নাকি? পিঁ পিঁ করে আওয়াজও হচ্ছে। কিছু বোঝার আগেই দেখি আর একটা পুলিশ আমায় ডাকছে, “ইস গেটসে আইয়ে স্যার।“

সবাই স্যার স্যার করছে - টি-শার্টের কলারটা তুলে দিলাম। যেতেই ওই মেশিনটা দিয়ে আমাকেও পুরো বডি উপর থেকে নিচে সব চেক করছে। পকেট এর কাছে যেতেই পিঁ পিঁ আওয়াজ। “জেব মে কেয়া হায়? কুছ নেহি বাবা নস্যি কা কৌটো হ্যায়।“

“কেয়া? লস্যি হ্যায়? উওভি কৌটা মে - জেব কে আন্দার!”

“আরে না না লস্যি নয় লস্যি নয়, নস্যি। নাকমে দুই আঙ্গুল দিয়ে ঢুকাতে হায়, তারপর হাঁচ্চো হাঁচ্চো হাঁচি হোতা হায়!”

কি বুঝলো কে জানে? বললো “ট্রে মে রাখ কে আইয়ে!”

তারপর চেক টেক করে ছাড়লো। যাক গিয়ে, জলের বোতলটা নিয়ে নিল। বলল এত বড় পেপসি বোতলে জল নিয়ে যাওয়া যাবে না। বললো ভিতরে ই জল দেবে। টিফিন বক্সটাও আটকে দিয়েছিল। অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে এক কামড় ঠান্ডা পরোটা আর তরকা খেয়ে প্রমাণ দিয়ে তবে যেতে দিল। খুব অভদ্র, মেওড়া শালা! বাংলা বোঝেনা!

আর ইয়া লম্বা লম্বা সব পুলিশ দেখেই ভয় লাগে। খুঁজে খুঁজে পেলাম ৮ নম্বর গেটের কাছে। কেউ নেই। আমি একা। কি করি - বসলাম চেয়ারে। কি সুন্দর গদি আঁটা চেয়ার। ঢেকুর উঠছে, চোরা অম্বল হয়েছে ওই ঠান্ডা পরোটা আর ডিম তরকা খেয়ে ওই পুলিশটার পাল্লায় পড়ে। কি করি কি করি! ওই তো একটা চায়ের স্টল, চা খেয়ে আসি।

“একটা ছোট খুড়ির চা দাও তো ভাই, আর ওই গোল বিস্কুট একটা!”

“স্যার চা নেই, অনলি কফি, আর ওটা চকো কুকি। স্যার টু হান্ড্রেড রুপিজ! হান্ড্রেড ফর কফি এণ্ড হান্ড্রেড ফর কুকি।“ আঁতকে উঠলাম।

“এত দাম! থাক বিস্কুট লাগবেনা।“

“স্যার খেয়ে দেখুন দারুণ খেতে! স্যার ফাস্ট টাইম?”

স্যার স্যার শুনে নিজেকে কেমন বস বস লাগছে। “দাও তাহলে, না না আমি প্রায়ই যাই।“

বেটা ঠিক বুঝেছে ফাস্ট টাইম এরোপ্লেনে যাচ্ছি কিন্তু ব্যাটা সকালবেলা ডাহা ঠকালো! এত বড় কাপে কফি দিয়েছে খাওয়াও যাচ্ছে না। কি গরম। হরবর করে খেতে গিয়ে জিভ পুড়ে গেল! আর পুচকি বিস্কুট লেড়ো বিস্কুট এর ওপর ক্যাডবেরি ছড়ানো। হাটতে পারছি না। কি পায়ে লাগছে। নতুন জুতো পরে ফোসকা পড়েছে।

টাইম হয়ে গেল, এবার প্লেনে ওঠাচ্ছে। লাইন দিয়ে দাঁড়ালাম সবাইকে দেখে। আমি উলের টুপিটা পড়ে নিয়েছি, যদি ঠান্ডা লাগে। কেউ তো পড়েনি। আমায় সবাই তাকিয়ে দেখছিল। মনে মনে হাসতে লাগলাম দেখ দেখ, তারপর উপরে ঠান্ডা লাগলে বুঝবি। হুঁ হুঁ বাবা বস বলে দিয়েছে! আমার মনে হল ওরা কেউ জানে না। প্রথমবার চড়ছে।

একটা বেশ সুরঙ্গের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে একেবারে এরোপ্লেনের দরজার সামনে। দেখি সুন্দর একটা মেয়ে ফ্রক পরে সবাইকে নমস্কার করছে!

“স্যার নমস্কার! হুইচ সিট নাম্বার?”

“নমস্কার। সিট নম্বর…” বলেই টিকিটটা আর ওই পোস্টকার্ডের মতো একটা কার্ড দিয়েছিল ওইটা দিলাম।

আমায় একটা জানলার ধারে সিট দিল। ব্যাগ থেকে টিফিন বক্স আর গামছা টা বের করে বসলাম। কিন্তু কাঠের চেয়ার তো নেই! বেশ গদি আঁটা চেয়ার আর সিটগুলোতে বেল্ট বাঁধা! জানালাগুলো তো খোলে না। গ্রিল ও তো দেওয়া নেই। বস টা বোধহয় অন্য প্লেনে গেছিল। এটা অন্যরকম প্লেন, বসটা কিছুই জানে না। কি আর করা গামছাটা হাতেই ধরে রাখলাম। টিফিন বক্সটা সামনের ফোল্ডিং টেবিল টায় রাখলাম। একটু পরে আমার পাশে একজন মহিলা বসলেন মাথায় সানগ্লাস লাগানো। আমায় দেখে একটা মুচকি হাসলো। আমিও একগাল হাসি। আর আমাদের অফিসের মেয়েগুলোকে দেখো সব গাবদা গোবদা, তাতেও কি ডাঁট, মুখ বেঁকিয়েই আছে। সারাক্ষণ লিপস্টিক লাগাচ্ছে। ওরে, তোরা এসে দেখ কি সুন্দর সব দেখতে! ঠিক লক্ষ্মী ঠাকুরের মতো!

সিটের হ্যান্ডেলের পাশে একটা বোতাম ছিল। টিপতেই সিট এর পিঠদানিটা পটাং করে পিছনে হেলে গেল। দারুন তো! বারবার বেশ দোল খাচ্ছিলাম, হঠাৎ

পিছন থেকে একজন বলে উঠলো সিট প্রপারলি!

ও বাবা লোকটার হাঁটুতে লেগেছে, এই রে! চুপ করে বসে রইলাম। এবার অ্যানাউন্স করছে বলছে সিট বেল্ট লাগাতে। কি করে লাগাবো! টানাটানি করছি, তখন পাশের ওই মহিলা সিট বেল্ট লাগিয়ে দিল। আমি বেশি কায়দা মারতে গিয়ে সিটবেল্টটা কি টাইট হয়ে গেল! দূর দূর ঝামেলার শেষ নেই। ওই প্লেনের মেয়েটা এসে বলল “ফোল্ড ব্যাক দা টেবিল প্লিজ”, আর সব্বাইকে টফি দিয়ে গেল। আমি চারটে টফি নিলাম। কি অমায়িক ব্যবহার আর কি সুন্দর সবাইকে দেখতে! ঠিক লক্ষী ঠাকুরের মতো!

আমি বললাম “ইয়েস ইয়েস, ব্রেকফাস্ট স্যার, সরি সরি, দিদিম্যাডাম। প্লিজ হট হট পরোটা তরকা আফটার এরোপ্লেন উড়িং।“

“স্যার উই উইল গিভ ইউ ব্রেকফাস্ট। প্লিজ গিভ ইট টু মি, আই উইল পুট ইট ইন হ্যাট রাক।“

“নো স্যার, দুর, ম্যাডাম দিদি, নো হ্যাট, এটা উলের টুপি। দার্জিলিং দার্জিলিং। একগাল হেসে বললাম।“ পাশের মহিলা ও হাসছিল। তাহলে ঠিক ইংরেজি বলেছি।

একটু নস্যি নিতে গিয়ে হাত কেঁপে উড়ে পড়ল, আর পাসের মহিলা হ্যাঁচ্চো হ্যাঁচ্চো! “ডিসগাস্টিং! হোয়াট আর ইউ ডুয়িং!”

“সরি দিদিভাই হাত ফসকে নস্যি ফলিং, ঘুষিং আপনার নোজ! তাই হ্যাঁচ্চো হ্যাঁচ্চো! সরি সরি খুব খুব দুঃখিত। “

“ওকে ওকে” রাগ করে বলল ওই মহিলা। প্লেনটা অনেক উপরে উঠেছে। মেঘের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে, কি দারুন লাগছে। কিন্তু বাজপাখি নেই তো! বস টা বোধ হয় গুল মেরেছে।

ব্রেকফাস্ট দিল। কত রকম খাবার! আবার প্লাস্টিকের চামচ কাটা চামচ দিয়েছে। টেবিলে রেখে গেল। মার গুলি পরোটা তড়কার। আগে এটাই খাই! কাটা চামচ দিয়ে কখনো খাইনি। তাও খাচ্ছিলাম টুকটুক করে, কিন্তু একটা বিস্কুট এর মত কি দিয়েছে, সেটা খেতে গিয়ে কাঁটা চামচের একটা সরু ডাণ্ডি ভেঙে গেল। দেখলাম কেউ দেখেনি। মুশকিলে পরলাম কড়াইশুঁটি খেতে গিয়ে। সেদ্ধ করে দিয়েছে। কয়েকটা চামচে ফুটিয়ে খেলাম। একটা বোধ হয় সেদ্ধ হয়নি। হরবর করতে গিয়ে স্লিপ করে কোথায় উড়ে গেল! আমি চুপ্টি মেরে মুখ গুঁজে খেয়ে যাচ্ছি। সামনের লোকটা একবার পিছনে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিল, বোধহয় ওর গায়ে পড়েছে। নিয়ে গেল সব, আর চা ও দিল। খেয়ে দেয়ে জানলা দিয়ে মেঘ দেখছিলাম। হঠাৎ দেখি আমি উড়ছি, পাশে আমার বস ও উড়ছে, আর উড়ছে দুটো বাজ পাখি। দেখি পাশ দিয়ে আর একটা প্লেন যাচ্ছে, আর ওই মহিলা জানালা দিয়ে আমায় টা টা করছে। উড়ছি - উড়েই যাচ্ছি - হাতগুলো ব্যথা হয়ে গেল।

“স্যার স্যার গেটআপ! উই রিচড দিল্লি। স্যার গেট আপ।“

“ওমা ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। দেখি ওই প্লেনের মেয়েটা ডাকছে। যাক বাবা দিল্লিতে এসে গেছি।“

দিল্লির গল্প পড়ে বলবো। আর হ্যাঁ তোমরা যারা এরোপ্লেন চড়তে চাও আমায় কন্টাক্ট করে নিও। আমি ডিটেইল বলে দেবো, কেমন! আচ্ছা আজ টাটা বাই বাই!







Comments


bottom of page