ঘুরে দেখা ইতিহাস
- NM84 Members
- Oct 20, 2023
- 2 min read
সুমনা মুখার্জি
সনটা ছিল ১৯৩৬, যখন মহাত্মা গান্ধী সবরমতী আশ্রম ছেড়ে মহারাষ্ট্রের ওয়ার্ধা গ্রামে 'সেবা গ্রামে' ওনার আশ্রম তৈরি করেন। এখান থেকেই ওনার স্বাধীনতার সংগ্রামের আন্দোলন পরিচালনা করতেন উনি।ইতিহাসের পাতায় তাইসেবাগ্রাম এখনো চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।

গান্ধীজী ওয়ার্ধাতে ১৯৩৪ সালে এসেছিলেন যমুনা লালজী বাজাজের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে, 1936 সালের এপ্রিল মাসে 'সে গাঁও' নামক গ্রামে বাসস্থান তৈরি করেন এবং এর নামরাখেন 'সেবাগ্রাম' - যার অর্থ হলো 'সেবার জন্য গ্রাম'। তখন গান্ধীজীর বয়স ৬৭, তখনথেকেই এই গ্রামে হয়ে ওঠে আকর্ষণীয়, ১৯৩৬ থেকে মৃত্যু ১৯৪৮ সাল এখানেই ছিল তার বাসস্থান।

এ তো গেলঐতিহাসিক তথ্য! এবার আসিআমাদের সেবা গ্রাম ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতায়। নাগপুর থেকে ঘন্টা দুয়েক যাত্রা গাড়িতে। মসৃণ হাইওয়ে ছেড়ে কিছুটা গ্রাম্যপথ ধরেই ঢুকলাম সেবাগ্রামে, সেখানে লুকিয়ে আছে কত ঐতিহাসিক মুহূর্ত, তথ্য ওমনীষীদের ফেলে যাওয়া পদচিহ্ন। শান্তির প্রকৃত অর্থ এখানে যেন পাফেলেই বুঝতে পারলাম। ঢোকার জন্য কোনটিকিটের ঝামেলাও নেই। সবার জন্য অবারিত দ্বার। সবার প্রথমেই যে মাটির কুটির তার নাম শান্তি কুটির। সামনে একমহিলা চরকায় সুতো কেটে যাচ্ছেন আপন মনে, যেন পৌঁছে দিচ্ছেন সবাইকে সেই যুগে - যেখানে গাওয়া হতো "মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই"।

সামনেই প্রার্থনাস্থল - সেখানে ভোর৬ টা থেকেই শুরু হয় সর্বধর্মপ্রার্থনা গীতি - আবারও অবাধ প্রবেশ সেখানেও - সর্ব ধর্মের, সব জাতের মানুষেরষের। পুরো আশ্রম বড়বড় বহু পুরনো বৃক্ষের ছায়ায়, যেন শান্তির ছায়া দিচ্ছে আশ্রমবাসীদের।

গাছের গুঁড়ি কেটেই বানানো হয়েছে বসার জায়গা - কোন কৃত্রিমতার জায়গা নেই, শুধুই প্রকৃতি তার কোনে উজাড় করে দিয়েছে শান্তি আর ভালোবাসা- অদ্ভুত এক প্রশান্তি। একটু দূরেই 'বাপু কুটির' যেখানে বাপুজীর রান্নার ব্যবস্থা, স্নান ঘর, লাইব্রেরি সব বহুযত্নে সংরক্ষিত রয়েছে। ওনার মিটিং স্থল ও মাটির, সেখানে মাটিতে বসেই কত জ্ঞানীগুণীজন এসে কতবিচার বিবেচনা করে গেছেন ভেবেই রোমাঞ্চিত হচ্ছিলাম।

বাপুর ব্যবহৃত জিনিসপত্র অতিথিদের জন্য বানানো ঘর আরো কতকি! একটি টেলিফোন বুথ ও চোখে পড়ল, ব্রিটিশ সরকারের সাথে যোগাযোগের জন্যই ছিল ওইটেলিফোন যা এখনো রাখা আছে। একটু দূরে দূরেই রাখা মাটির বড় বড় জলের হাঁড়ি - পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে সেবা কর্মীরা বিতরণ করছেন শীতল জল। কোলাহল নেই, নেই কোন কৃত্রিমতা, চারিদিকে শুধু ইতিহাসের স্মৃতি আর একঅদ্ভুত প্রশান্তি - যা শুধু অনুভব করা যায়।

প্রবেশদ্বারের কাছে খাদির জিনিসপত্র বিক্রয় হচ্ছে। এছাড়া আশ্রমবাসীদের হাতে তৈরি মধু, ইত্যাদি- । আশ্রমের বাইরে গ্রাম্য দেশী (মহারাষ্ট্রিয়) খাবার অত্যন্ত সুলভ দামে অতিথিদের জন্য পাওয়া যাচ্ছে। রাত্রি বাসেরও ব্যবস্থা আছে। তবে আমরা মহারাষ্ট্রিয়ান খালির রসাস্বাদন করেই ফিরে এসেছিলাম নাগপুরের দিকে, বুকে নিয়ে একরাশ স্নিগ্ধতা, মাটির শীতল স্পর্শ, আর ঐতিহাসিক রোমাঞ্চ!
Comments