লাহুল স্পিতি ভ্রমন (সোমা সরকার)
- NM84 Members
- Oct 1, 2022
- 7 min read
অনেক দিন ধরে কিন্নর যাওয়ার খুব ইচ্ছা। এবার সুযোগ এসে গেল, সঙ্গীসাথী জোগাড় হল, ঠিক হল আমরা শিমলা হয়ে কিন্নর ভ্যালি, স্পিতি ভ্যালি ঘুরে, কুঞ্জম পাস হয়ে কেলং মানালি মনিকরণ ঘুরে ফিরব।
স্পিতি ভ্যালি যাবার দুটো পথ আছে, শিমলা থেকে কিন্নর ভ্যলি হয়ে যে পথে আমরা গিয়েছি আর একটা মানালি থেকে কুঞ্জুম পাস হয়ে যাওয়া। দ্বিতীয় পথ টি বছরের বেশীর ভাগ সময় বরফ পরে। কুঞ্জুম পাস বন্ধ হয়ে গেলে আর যাওয়া যায় না।
আজ আমরা টাবো যাবো, রাত্রিবাস টাবো তে। আমরা যেহেতু শিমলা, সারাহান, সাংলা ঘুরে কল্পায় ছিলাম, টাবো যাবার জন্য কল্পা থেকে রেকমপিও হয়ে পাওরি এসে কাজা র রাস্তা ধরলাম। শতদ্রু নদী আমাদের সঙ্গী হল। এরপর একে একে শহিদ সেতু, আকপা সেতু, কিরন খার সেতু পার হয়ে প্রথমে এল স্পিলো, তারপর পু, তারপর ডবলিন, এরপর খাব।দুইধার থেকে আসা শতদ্রু নদী ও স্পিতি নদী এখানে মিলিত হয়ে মিলিত ধারা স্পিতি নদী হিসাবে বয়ে গেছে। এখানে একটি সেতু আছে। সেতু র অপরপারে পাহাড় কেটে করা রাস্তা দিয়ে যেতে হবে। জায়গা টা খুব সুন্দর। ভিডিও ও ফটোশ্যূটের চোটে রীতিমতো রাস্তা জ্যাম। প্রকৃতি পুরো চেঞ্জ হয়ে গেল, যদি ও ম্যাপ অনুযায়ী এটা কিন্নর জেলা, সুমডোর পর স্পিতি সুরু হবে। এখান থেকে স্পিতি নদী আমাদের সঙ্গী হল। আমরা চলেছি পাহাড়চূড়ায়, যত উপরে উঠছি ততই গাছপালার সংখ্যা কমে আসছে, পাহাড়ের গা চিরে কালো ফিতের মত রাস্তা। নাকো গ্ৰাম পৌঁছে গেলাম। আমাদের বড় গাড়ী বলে কিছুটা দূরে দঁড়ালো। আমরা পায়ে হেঁটে এগিয়ে গেলাম। দিকনির্দেশ করা আছে, সেইমতো এগিয়ে গিয়ে নাকো লেক পৌঁছালাম। উইলো ও পপলার গাছ দিয়ে ঘেরা নাকো লেক প্রায় 12014 ft উচ্চতা য় অবস্থিত। মাঝারি আয়তন, বছরের বেশির ভাগ সময় বরফে ঢাকা থাকে। এখন বোটিং হচ্ছে। লেকের ধারে ক্যাম্পিং র ব্যবস্থা আছে। লেক দেখে গ্ৰামের মধ্য দিয়ে ফিরে নাকো মনাস্ট্রি র সামনে এলাম। মনাস্ট্রি তখন বন্ধ ছিল। স্থানীয় ভাষায় গানের সঙ্গে কিছু স্থানীয় মানুষ ও কিছু পর্যটক নাচ করছে। নাকো গ্ৰামে থাকার জন্য বেশ কিছু হোটেল ও হোমস্টে আছে, রেস্তোরাঁ ও আছে। আমরা নাকো তে লাঞ্চ সেরে নিলাম।



নাকো থেকে টাবোর পথে যাত্রা সুরু হল, এবার আমরা পাহাড় থেকে নীচের দিকে নামছিলাম, কিছু দূর যাওয়ার পর গাড়ী দাঁড়িয়ে গেল, ধ্বস নেমে রাস্তা বন্ধ, উপর থেকে দেখতে পাচ্ছি সারি সারি গাড়ী দাঁড়িয়ে আছে। এই অঞ্চলের পাহাড়গুলো ধ্বসপ্রবন, যখনতখন পাথর গড়িয়ে পড়ে। আধঘন্টা পরে রাস্তা পরিষ্কার হল। স্পিতি নদী কে সঙ্গী করে পথ চলা সুরু হল। আমরা সুমডো পার হয়ে গেলাম, ম্যাপ অনুযায়ী কিন্নর জেলা থেকে স্পিতি তে প্রবেশ করলাম। গিউগ্ৰাম যাবার জন্য এই রাস্তা ছেড়ে অপেক্ষাকৃত সরু রাস্তায় ঢুকলাম। গিউগ্ৰাম ঢোকার মুখে রাস্তা য় তোরন, রাস্তা খুব সরু পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে গিউ নালা। জলের রঙ কালো, এই দিকের কিছু পাহাড়ের রঙ ও কালো। গিউগ্ৰামে অল্প কয়েক ঘর লোকের বাস, যেদিকে চোখ যাচ্ছে শুধু পাহাড়, তার মধ্যে একটি মনাস্ট্রি মাথা উঁচু করে রয়েছে, আর আছে প্রায় 600 বছরের পুরোনো একটি মমি। 1975 সালে ভূমিকম্পের পর এখানে ছটি স্তূপ নস্ট হয়ে যায়। 1981 সালে বাঙ্কার খননের সময় ITBP জওয়ানরা মমি টি খুঁজে পায়। পরবর্তী কালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা গবেষণা করে জানিয়েছেন মমিটি সাংঘা তানজিনের, 1430 সাল থেকে একই ভঙ্গিতে রয়েছে। মমিটি হাঁটু মুড়ে বসে থাকা অবস্থায় পাওয়া গেছে। মমি সংরক্ষনে কোন রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়নি, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ভাবে সংরক্ষিত। দাঁত চুল চামড়া অবিকৃত, জাপান ও তিব্বত অঞ্চলে এই ধরনের মমি দেখা যায়। মনে করা হয় এই অঞ্চল কে রক্ষা করার জন্য উনি জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, এখন ও রক্ষা করে চলেছেন। মমিঘর থেকে বেরিয়ে এসে মনাস্ট্রি দর্শন করলাম।


গিউগ্ৰাম থেকে বেরিয়ে এসে মূল রাস্তা ধরে আমরা এসে পৌঁছালাম টাবো। টাবো র উচ্চতা 10760 ft, খুব ছোট জমজমাট জায়গা। কিছু হোটেল, রেস্তোরাঁ, বাজার, ব্যাঙ্ক, সব মনাস্ট্রির কাছাকাছি। আসার পথে দেখা গ্ৰামগুলিতেও থাকার জন্য ক্যম্পের ব্যবস্থা আছে। পরদিন সকালে টাবো মনাস্ট্রি দেখতে গেলাম, আমাদের হোটেল থেকে মনাস্ট্রি দু তিন মিনিটের রাস্তা। দুটো মনাস্ট্রি, নূতন ও পুরানো, এখন নূতন মনাস্ট্রি তে আরাধনা হয়, পাশে লামাদের স্কুল ও লামাদের আবাস । চারিদিকে আপেল গাছ। পাশেই টাবো র পুরানো মনাস্ট্রি। হাজার বছরের পুরোনো টাবোর পুরানো মনাস্ট্রি মাটির তৈরি, হাজার বছরের পুরোনো জৈব রঙ দ্বারা অঙ্কিত। স্টাকো ইমেজেস ও মুরাল পেইন্টিং এখনও অমলিন। টাবো কে হিমালয়ান অজন্তা বলা হয়। ইউনেস্কো র ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকায় টাবো মনাস্ট্রির নাম উঠে এসেছে।


আজকের গন্তব্য কাজা কিন্তু যাবার পথে ধনকর ঘুরে যাবো, 12774ft উচ্চতায় অবস্থিত ধনকর একসময় স্পিতির রাজধানী ছিল। এখানে সকলে ধনকর মনাস্ট্রি ও ধনকর লেক দেখতে যায়। এই অঞ্চল শীতল মরুভূমির অন্তর্গত, প্রবল হাওয়ায় পাথরে ক্ষয় হয়ে শঙ্কু আকৃতির ফাঁপা থাম সৃষ্টি করেছে, যাদের নাম হল হুডু। ধনকর মনাস্ট্রি কতগুলো হুডুর মাঝখানে অবস্থিত। অবাক লাগে কিভাবে ঝুলন্ত অবস্থায় বছরের পর বছর রয়েছে। ধনকর মনাস্ট্রি ও মাটির তৈরী, এখানে চমৎকার একটি মেডিটেশনের কক্ষ আছে। মনাস্ট্রিতে ছবি তোলা নিষেধ। মনাস্ট্রি লাগোয়া রেস্তোরাঁ আছে। ধনকর গ্ৰামে থাকার জন্য হোমস্টে আছে। কিছু দূরে ধনকরের নূন মনাস্ট্রি। ধনকর গ্ৰাম থেকে ধনকর লেক দুঘন্টার ট্রেকিং রুট। ধনকরে একটা হেলিপ্যাড আছে।
ধনকর ঘুরে আমরা কাজা গেলাম, 12470ft উচ্চতায় অবস্থিত কাজা এখন স্পিতির সদর শহর। বাজার ব্যঙ্ক, হসপিটাল, পেট্রল পাম্প সব আছে। চারিদিকে রুক্ষ বাদামি পাহাড়, একপাশ থেকে বয়ে চলেছে স্পিতি নদী। নীল আকাশ হচ্ছে কাজার বৈশিষ্ট্য। আমরা আংশিক মেঘলা পেয়েছিলাম। এখানে পাহাড়ের গায়ে জাতীয় পতাকা আঁকা রয়েছে। হোটেলের জানালা দিয়ে স্পিতি নদী দেখা যাচ্ছে। গিয়ে ব্যগপত্তর রেখে ভাবলাম ঘুরে আসি। না অত সহজ নয়, বেশ অনেক টা নামতে হবে। কাজার মনাস্ট্রি দেখতে গেলাম, এটা বয়সে নবীন, তখনও কাজ চলছে। ধনকর থেকেই দেখছি খুব হাওয়ার জোর, কাজাতেও সেই জোর হাওয়া, সঙ্গে মুঠো মুঠো বালি উড়ে চোখে মুখে ঢুকে যাচ্ছে। আর ঘোরাঘুরি করা গেল না। এই কদিন হিমাচল এসে কোন গরম জামা লাগে নি, এই কাজায় এসে রাতে চাদর ঢাকা নিতে হল। সকালে উঠে ব্রেকফাস্ট করে পিনভ্যালি র উদ্দ্যশ্য রওনা দিলাম। পিনভ্যালি ন্যাশানাল পার্ক লেখা তোরন পার হয়ে এগিয়ে চলেছি।এই জায়গার প্রকৃতি আলাদা, বাদামি ও সবুজ মেশানো পাহাড়, মাটিতে সবুজের ছোঁয়া। মাঝে মাঝেই বেশ কয়েকটা ঘরবাড়ি নিয়ে ছোট ছোট গ্ৰাম। যেখানে স্পিতি নদী আর পিন নদী মিশেছে, জায়গা টা খুব সুন্দর। কাঠের পাটাতন দেওয়া একটা ঝুলন্ত সেতু আছে, সেটা আবার হাওয়ায় দুলছে। নীচে খরস্রোতা নদী। শুনেছি পিন পারবতী পাস ট্রেক করে এই রাস্তায় নামে। একসময় পৌঁছে গেলাম শেষ গ্ৰাম মুদ। পাহাড়ের গা বেয়ে ঝরনা, কোথাও কোথাও সেটা জমে বরফ হয়ে গেছে। অল্প কিছু বাড়ীঘর, সামনে চাষের জায়গা, এখানে মটর নাকি বিখ্যাত। একটি মাত্র রাস্তা। বেশ কিছু হোটেল হোমস্টে আছে। আমাদের ও মনে হচ্ছিল দুইদিন কাজায় না থেকে একদিন এখানে থাকা যেত।




পিনভ্যালি ঘুরে আবার কাজার দিকে ফিরে এলাম, কাজা পার হয়ে গেলাম হিক্বিম ভিলেজ, এখানে 14570ft উচ্চতায় পৃথিবীর সর্বোচ্চ পোস্ট অফিস অবস্থিত। এতদিন পাহাড় ঘুরে ঘুরে গাড়ী উঠেছে, এখানে আট দশ ফুট খাঁড়া উঠে যাবার পর বাঁক নিচ্ছে। নদী আরো নেমে যাচ্ছে আর বরফ ঢাকা পাহাড় গুলো কাছে চলে আসছে। এই গ্ৰামে অল্প সংখ্যক লোকের বাস, বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম হলো এই পোস্ট অফিস। পোস্ট অফিস টি বর্তমানে রাস্তা র ধারে নিয়ে আসা হয়েছে, ডাকবাক্সের আকৃতি দেওয়া হয়েছে। এক জায়গায় বিভিন্ন পিকচার পোস্টকার্ড পাওয়া যাচ্ছে, অনেকেই কিনে ঠিকানা লিখে ডাকবাক্সে ফেলে দিচ্ছে।

হিক্বিম থেকে আমরা গেলাম 14500ft উচ্চতার লানজা গ্ৰামে। লানজা তে বিশাল এক বুদ্ধমূর্তি বসানো আছে, মূর্তি টি ভ্যলির দিকে মুখ করে বসানো রয়েছে, গ্ৰামের দিকে পিছন ফিরে বসে আছে, মনে করা হয় তিনি সমগ্ৰ ভ্যালি কে রক্ষা করে চলেছেন। লানজার আরো একটি বিশেষত্ব হলো এখানে ফসিল পাওয়া যায়, বহু বছর আগে ভূপৃষ্ঠ উঁচু হয়ে হিমালয় পর্বত গঠিত হয়। আগে যে টেথিস সাগর ছিল, তার সামুদ্রিক প্রানী র জীবাশ্ম এখানে পাওয়া যায়। লানজা গ্ৰাম থেকে 20679 ft উচ্চতার বরফঢাকা চাউ চাউ কং নিলদা শৃঙ্গ মুখোমুখি দেখা যায়। লানজা এসেই বৃষ্টি সুরু হয়ে গেল, ওমা জল তো নয়, ছোট ছোট বরফকুচি, আর খুব ঠান্ডা। একটা ছোট দোকানে ঢুকে পড়লাম। দোকানের গরম গরম ম্যাগী তখন মনে হচ্ছে অমৃত। এরপর আমাদের যানবাহন চলাচলকারী পৃথিবীর সর্বোচ্চ গ্ৰাম কমিক যাবার ছিল, কিন্তু আবহাওয়া খারাপ হয়ে যাওয়ায় কাজা ফিরে এলাম।

পরদিন লোসার থাকার কথা।লোসার যাবার পথে প্রথমে গেলাম কি মনাস্ট্রি। কি মনাস্ট্রি স্পিতি তে সব থেকে বড় মনাস্ট্রি, 13500ft উচ্চতায় অবস্থিত। এই মনাস্ট্রি তে দুষ্প্রাপ্য বইয়ের সংগ্ৰহশালা, মুরাল, পেইন্টিং, থাঙ্কা দেখার মত। মনাস্ট্রির উপর থেকে নীচে স্পিতি ভ্যালি স্পিতি নদীর অপরূপ শোভা, দুচোখ ভরে দেখার মত। কি মনাস্ট্রি দেখে 13596ft উচ্চতায় ছিছাম ব্রীজ দেখতে গেলাম। ছিছাম ব্রীজ এশিয়ার সর্বোচ্চ সেতু আর বিশ্বের সর্বোচ্চ ঝুলন্ত সেতু। দেখছি আর ভাবছি এমন দুর্গম এলাকায় অতটা উচ্চতায় এমন সেতু কিভাবে করা সম্ভব । সেতুর গার্ডরের রের ফাঁক দিয়ে অনেক নীচের জলস্রোতের ছবি তুললাম।

ছিছাম ব্রীজ দেখে লোসার পর্যন্ত দুপাশের দৃশ্যপট খুব সুন্দর। লোসারে বেশ ঠাণ্ডা, আকাশ জুড়ে মেঘ, জোরে ঠান্ডা হাওয়া বইছে, আসার সময় ভেবেছিলাম গ্ৰাম ঘুরে দেখব, এই ঠান্ডায় আর ইচ্ছে করলো না। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি বরফ পড়ছে। আজ চন্দ্রতাল ঘুরে কেলং যাবার কথা, হোটেল থেকে বলা হল, আবহাওয়া খারাপ তাড়াতাড়ি বেরিয়ে না গেলে চেকপোস্টে গাড়ী আটকে দেবে। আমরা খুব তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লাম। পথ ভয়ঙ্কর সুন্দর, পেঁজা তুলোর মত বরফ পড়ছে, রাস্তা পাহাড় খাদ সব সাদা চাদরে ঢেকে যাচ্ছে, মেঘলা আকাশ, দৃশ্যমানতা খুব কম, গাড়ী স্কিড করে যাচ্ছে, এর মধ্যে কালো ইয়াকের দল চড়ে বেড়াচ্ছে, অপূর্ব দৃশ্য। আমরা কুঞ্জুম পাস এসে পৌঁছালাম। গাড়ী থেকে নামালাম, তখনও বরফ পড়ছে, হাত পা জমে যাচ্ছে। কুঞ্জুম মাতাকে দর্শন করলাম । কথিত আছে কুঞ্জুম মাকে দর্শন করলে এই বিপদসঙ্কুল রাস্তায় সব শুভ হয়। আবহাওয়া খারাপ হয়ে যাওয়ায় আমাদের আর চন্দ্রতাল যাওয়া হল না। এবার কেলং ফেরার পালা। আমাদের পাশ দিয়ে চলছে চন্দ্র নদী। এতদিন ভয়ঙ্কর রাস্তা ঘুরে এবার এসে পড়লাম যন্ত্রনাদায়ক রাস্তায়। রাস্তা নয়, নদী খাতের মধ্যে দিয়ে চলা, চারিদিকে বালি ও বোল্ডার ছড়ানো, তার উপর দিয়ে গাড়ী চলছে, বছরে বেশি সময় এই রাস্তা বরফে ঢাকা থাকে। গ্ৰামফু পর্যন্ত প্রায় আশি কিলোমিটার রাস্তা এইভাবে চললো, খোকসারের কাছে এসে চকচকে পাকা রাস্তায় উঠলাম।



কুঞ্জুম পাস পার হয়ে যাবার পর থেকেই আমরা লাহুল এবং স্পিতি জেলা র স্পিতি ছেড়ে লাহুলে প্রবেশ করি। ভূপ্রকৃতি ও পাল্টে যায় , রুক্ষ পাহাড় সরে সবুজ পাহাড় জায়গা নেয়, মাটিতে ও সবুজের ছোঁয়া দেখা যায়। আগে লাহুল আর স্পিতি আলাদা জেলা ছিল। দেখতে দেখতে খোকসার শিশু তান্ডি পার হয়ে কেলং চলে গেলাম। লাহুল ও স্পিতি জেলার সদর শহর কেলং।

কেলং থেকে পরদিন ঘুরতে বেরিয়ে প্রথম থামলাম তান্ডি। এখানে চন্দ্রতাল থেকে আসা চন্দ্র নদী আর বারলাচা পাস সূরজতাল থেকে আসা ভাগা নদী একসঙ্গে মিলে চন্দ্রভাগা নামে বয়ে চলেছে। এই জায়গার পৌরাণিক গুরুত্ব আছে, এই অঞ্চলে জায়গা টা পবিত্র বলে মানা হয়।

এরপর গেলাম কেলং থেকে 44 km দূরত্বে ত্রিলোকনাথ মন্দির । দুপাশে বরফ ঢাকা পাহাড়, ডানপাশ দিয়ে চন্দ্রভাগা নদী বয়ে চলেছে, নীচে গ্ৰামগুলো সবুজে ঢাকা। সবজি খেত, ফলের বাগান। এই অঞ্চল খুব সুন্দর, দেখতে দেখতে মন্দিরে পৌঁছে গেলাম। মন্দির চত্বরে যাওয়ার আগে একটি বাজার আছে, প্রধানত পূজার সামগ্ৰী বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও বাসনপত্র, মালা, পোশাক পাওয়া যাচ্ছে, সব কিছুতে তিব্বতি প্রভাব স্পষ্ট। বেশ কিছু রেস্তোরাঁ ও আছে। মন্দির চত্বর ঘিয়ের গন্ধে মম করছে, শ্রদ্ধালুরা শিব ঠাকুরের মাথায় জল ঢালছে। পাশেই একটা মনাস্ট্রি আছে। মন্দির মনাস্ট্রি দর্শন করে আমরা উদয়পুর চলে গেলাম।




উদয়পুরে বিখ্যাত মৃকুলা দেবীর মন্দির আছে। কথিত আছে একাদশ শতাব্দীতে পান্ডবরা এই মন্দির নির্মাণ করেন, একটি মাত্র কাঠের ব্লক দিয়ে এই মন্দির তৈরী করা হয়। দেবী এখানে মহিষমর্দিনী রূপে পূজিত হন। মন্দিরের ভেতরটা অন্যরকম, খুব সুন্দর, ছবি তোলা নিষেধ। আমাদের হাতে ধাগা পরিয়ে প্রসাদ দিল। এই মন্দিরের পাশেই উদয়পুর বাজার।


কেলং ফিরে কেলঙের বিখ্যাত সাসুর মনাস্ট্রি দেখে এলাম। পরদিন সকালে 9km দীর্ঘ অটল টানেল পার হয়ে মানালি চলে গেলাম। সেই গল্প পরে কখনো!

Comments