সেকেন্দ্রা (নন্দকুমার হালদার)
- NM84 Members
- Oct 1, 2022
- 2 min read
দোর্দন্ডপ্রতাপ সম্রাট তিনি। রাজদরবারেযখন তিনি তার তখতএ বসতেন তখন তিনি কঠিন মনের সম্রাট, তার সূক্ষ্ম বিচার থেকে নিষ্কৃতি নেই কারো। আবার দরবার থেকে ফিরে সম্রাট এর খোলস ছেড়ে তিনিই কখনো প্রেমিক স্বামী, স্নেহময় পিতা, ঘনিষ্ঠ বন্ধু। রাষ্ট্রপরিচালনায় তিনি এতটাই কঠোর যে ছেলেকে শাস্তি দিতেও পিছপা হননি। জানিনা তার বুকের ভিতর তখন কি চলছিল, যখন এক বাবা আর এক সম্রাট এর মনের যুদ্ধ চলেছে, ছেলের বিরূদ্ধে যুদ্ধে সৈন্য পাঠাতে হচ্ছে এক রাজা কে! আবার যখন তিনি বয়স্যের সাথে বসে গান শোনেন, হাস্যকৌতুকে মেতে ওঠেন, অথবা কোন কবির কবিতা শোনেন তখন যেন তিনি অন্য পৃথিবীতে। বেগম দের সাথে যখন তিনি তার নিভৃত সময় ব্যয় করেন তখন তার আর একরূপ। নাকি এটা মনেকরতে হবে যে রাজার নিজস্ব কিছুই নেই, এমনকি তিনি নিজেও রাজ্যের জন্য। তাই যখন তিনি তার বেগমদের মধ্যে একজন কারো কাছে যান, তখন ও তাকে মনে রাখতে হয় যে তাঁর প্রায় সব বিয়েই রাজনৈতিক। হয় রাজ্যবিস্তার, অথবা রাজ্যরক্ষা। অবসর সময়ে তার বন্ধুদের সাথে গল্প করতে করতে তিনি শিখতেন টোডরমল এর কাছেঅর্থনীতি, মানসিংহের কাছে রাজনীতি, আবুলফজল এর কাছে সাহিত্য। বীরবল এর সাথে হাস্যরসের আড়ালে চলে ধর্মবিচার, জন্ম নেয় দিন-ইলাহীর ধারনা, যাতে পরিচিত সব ধর্মের ভালো দিক গুলি একত্র করার প্রবল ইচ্ছা। রাজ্য নিয়ে দিন রাত ব্যস্ত সম্রাট এর মনের কোনে ছিল হয়তো একটু বিশ্রাম এর ইচ্ছে। হয়তো বিকালের বৃষ্টি তে একটু ভেজার ইচ্ছে তার মনের কোণে লুকিয়ে থাকতো। হয়তো নিজের হাতে একটি ফুল তুলে সবার গোপনে প্রিয়ার বেনী তে আটকে দেবার গোপন ইচ্ছে তাকে সারাজীবন মনের ভিতরে বন্দী করে রাখতে হয়েছে।
সেই জন্যই মনে হয় তার ইচ্ছে ছিল মৃত্যুর পরে যেন তিনি এই রাজ্য রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে পারেন। নিজের সমাধিস্থল নিজেই তৈরী করে গেলেন তৎকালীন শহর এবংকোলাহল থেকে একটু দূরে। সেই সেকেন্দ্রা। আগ্রা ফোর্ট বা ফতেহপুর সিক্রির থেকে দূরে, শহরেরঅন্য প্রান্তে তৈরী হলো তার নিজের সমাধি।
মহাপ্রতাপশালী সম্রাট মৃত্যুর পরে চেয়েছিলেন শান্তি। তিনি চাননি তার সম্রাটোচিত ঔদ্ধত্য দেখাতে, চাননি তার ধনগরিমা সবার সামনে আনতে। (না কি সম্রাটের কোনো ধনসম্পদ থাকেনা, সে সব ও রাজ্যের ই?)
তাই দেখা যায় সে যুগের তুলনায় বেশ ছোট একটি বাড়ি। মাঝখানে মূল সমাধিগৃহ। তাকে কেন্দ্র করে চারিদিকে কয়েকটি ঘর, এবং তার চারিদিকে বারান্দা। তবে নির্মাণ শৈলীতে প্রাচীন ভারতীয় ছোঁয়া দেখতে পাওয়া যায়। বাড়িটির উপর বেশ কয়েকটি ছোটছোট চূড়া আছে, আর সেগুলি নিরেট নয়, নিচেফাঁকা, যাতে হাওয়া চলাচল করতে পারে। যে কারণে সমাধি ঘরটি একেবারে মাঝখানে হলেও হাওয়া চলাচল খুব ভালো, এবং বেশ শুকনো।
মূল বাড়িটি থেকে বেশ দূরে, প্রায় দুশো মিটার দূরে, উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। চার দিকে চারটি তোরণ। কিন্তু একটি তোরণ এই কেবল দরজা আছে, বাকিগুলো নিরেট।
ঘরের ভিতরের দেওয়াল গুলিতে ও বিশেষ কোনো কাজ করা নেই। খুব সাধারন ভাবে গড়ে তোলা। রাজ্য, কোলাহল সব কিছু থেকেদূরে নিভৃতে শান্তিতে চিরনিদ্রায় শায়িত সম্রাট জালালুদ্দিন আকবর!


মূল তোরন

মূল তোরন এর ভিতর দিয়ে সমাধি গৃহ

ভিতর থেকে মূল তোরন

ভিতর থেকে মূল তোরন

মূল সমাধিগৃহ

মূল সমাধিগৃহের উপরের ছাদের বৈশিষ্ট্য
Comentários