বনশ্রী ভট্টাচার্য - ফিরে দেখা - পূজোর বাজার
- NM84 Members
- Oct 11, 2021
- 2 min read
কি রে পূজোর বাজার হোলো? এই কথাটা শুনলে মনে হোতো পূজো এসে গেলো। আমাদের ছোটোবেলায় তো সারাবছর অনলাইনে এত কেনা কাটা হোতোনা। তাই পূজোর বাজার মানেই একটা হৈ হৈ ব্যাপার। শুধু কী জামাকাপড় ! জুতো, শ্যাম্পু, সেন্ট আরও কত সাজের জিনিস কেনা হোতো। আমি আবার একটু সাজুনি ছিলাম বলে জামার সাথে ম্যাচিং ক্লিপ, চুড়ি, মালা কিনতাম, আর ইস্ট মার্কেটে নির্মল কাকুর দোকান থেকেই এসব আনা হোতো। একটা বড়ো বাক্স ভর্তি জিনিস। ছুটির দিন দেখে বাজারে যেতাম। বাবা যেদিন বলতেন কাল সব কেনা হবে সেদিন আর পড়তে বসাই হোতোনা। তারপর বাজার থেকে ফিরে পরের দিনও পড়া বন্ধ। সেদিন যে পাড়ার কাকীমা জ্যেঠিমা আর দিদিদের জামা কাপড় দেখানোর পালা। শুধু দেখিয়েই ক্ষান্ত হোতামনা, সব গায়ে দিয়ে দেখাতাম। পাড়ার এক দিদি ছিলো তার নজর শুধু ওই সাজগোজের জিনিস ভরা বাক্সটায়। আর বাবাকে বলতো এত কিছু কিনে দিয়েছেন কাকাবাবু, মেয়ে তো আপনার আরও সাজুনি হবে। তা বলুক গে, অন্য সময় হলে হয়তো রেগে যেতাম, তখন জামাকাপড় আর লিপস্টিক, নেলপালিশের দিকে তাকিয়ে চুপ থাকতাম। সবাই চলে যাবার পর শুরু হোতো আমাদের পড়তে বসার যত ধুম। আসলে জামাকাপড় তো সব ভাঁজ খোলা, গোছাতে হবে তো।যাই হোক মা গজগজ করতে করতে সব ভাঁজ করতেন। দেখতে দেখতে মহালয়া চলে আসতো। মনে আছে তখন আমাদের বাড়ি টিভি ছিলোনা। সামনের দত্তকাকু সকালে ডাকতেন, ওনার বাড়ি মহালয়া দেখতাম। এরপর পূজোর কদিন পাড়ার প্যান্ডেলে হৈ হৈ করে কাটাতাম। সকাল বেলা স্নান করে নতুন জামা পরে মন্ডপে গিয়ে বসতাম। পূজো দেখার থেকে বেশী ঝগড়া করতাম। ভয় পেতাম বলে বাচ্চাগুলো আমার সামনে ক্যাপ ফাটাতো। তখন জামাকাপড়ের সাথে অনেকেই ক্যাপ আর বন্দুক কিনতো। সন্ধ্যেবেলা এক এক দিন এক এক দিকে ঠাকুর দেখতে বেরোতাম। এখনকার মতো বিরিয়ানি,রোল বা চাউমিন আমাদের ছোটোবেলায় ছিলোনা। ঝালমুড়ি, ফুচকা, এসব পেলেই খুশী ছিলাম। পূজোর কদিনও রোজকার মতো বাড়িতেই খাওয়া হোতো। দশমীর দিন মন খারাপ হলেও ওইদিনই আমার সবথেকে ভালো কাটতো। স্কাউটের পক্ষ থেকে ঠাকুর বিসর্জনের জন্যে ঘাটে যেতাম, তবে আমাদের গাইডদের নীচে নামতে দেওয়া হতনা, আমরা যেখানে আমাদের স্কাউটের টেন্ট হত সেখানে থাকতাম। দশমীর পর থেকে শুরু হোতো পাড়ায় ঘুরে ঘুরে নমস্কার আর নাড়ু জোগাড়ের ধুম। এত নাড়ু খেতে না পারলেও ভাগ ছাড়তামনা। হাতে করে বাড়ি নিয়ে আসতাম। আর খোঁজ রাখতাম কোন কাকীমা কবে ঘুগনি বানাবে। বিজয়ার প্রণাম সারতে গিয়ে অগ্রিম লক্ষীপূজোর নেমন্তন্ন পেয়ে যেতাম। তবে যে বাড়িতে খিচুড়ি ভোগ হত শুধু সে বাড়িতেই যেতাম। এরপর কদিন একটু মন খারাপ,পড়তে বসতে হত যে। আবার দেখতে দেখতে কালীপূজো এসে যেত। বাড়ি বাড়ি বাজি রোদে দেওয়া হত। তখন তো এত নিষেধ ছিলোনা, রকেট, চকলেট, টু সাউন্ড আর আমাদের ছোটোদের তারাবাতি, রংমশাল, সাপবাজি, চরকি, নানারকমের বাজি ছিলো। ভয় পেতাম বলে একটা লম্বা মশাল বানিয়ে তাই দিয়ে কালীপটকা ফাটাতাম। কালীপূজোর আগে বাড়ির ছাদে টুনি দিয়ে সাজানো হত আর ইঁট দিয়ে একটা ঘর বানিয়ে তাতে আলো দিয়ে দীপাবলি লেখা হত। একটা একটা করে পূজো কাটতো আর স্কুল খোলার দিন এগিয়ে আসতো।স্কুল খুললেই পরীক্ষা।
সময়ের সাথে সাথে কত পরিবর্তন হয়েছে। এখন বাইরের চাকচিক্য বেড়েছে। সেই নতুন জামা কিনে সবাইকে দেখানো, লুকিয়ে লুকিয়ে নাড়ু নিয়ে আসা, বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রনাম করে আশীর্বাদ পাওয়া আর নাড়ু নিমকি ঘুগনি খাওয়া, এখন আর হয়না।
মাঝে মাঝে মনে হয় যদি ভুতের রাজার কাছে বর চাইতে পারতাম, তাহলে চিত্তরঞ্জনে কাটানো সেই ছোটোবেলা ফিরে পেতে চাইতাম।
সকলের পূজো ভালো কাটুক, সকলে সুস্থ থেকো।
Comments