top of page

স্বাগতা বরুয়া - স্বপ্ন নিয়ে

আজ মহাষ্টমী। মন্ডপে মন্ডপে বাজছে ঢাক, ঢোল, কাসর, ঘন্টা। মাইকে বাজছে পুরোনো দিনের বাংলা গান।

আজ ভোরে ঘুম থেকে উঠেই মনটা বড্ড ছটফট করছে — কখন ঢুকবে তার আদরের নয়নমণি, একমাত্র নাতি, "গোগোল"। বার বার করে বারান্দায় এসে উঁকি দিচ্ছে বকুল।

‌ গোগোলের জন্মের সময় গিয়ে ছ'মাস থেকেছিলো। আসার সময় খুব কষ্ট হয়েছিল। বাড়ি এসে এতো মন খারাপ ছিলো যে একমাস পরে আবার ছুটে গেছে ছেলের বাড়িতে। বৌমা অবশ্য সেইসময় মাথায় করে রেখেছিলো শাশুড়ি কে। বলেছিলো —আপনি আর বাবা দুজনেই এখানে সারাজীবনের মতো চলে আসুন।

‌ বকুলের খুব ইচ্ছা থাকলেও অরূপ বাবুর মোটেও পছন্দ নয় ছেলের বাড়ি থাকা। উনি বলেন, ছেলেকে কতো স্বপ্ন নিয়ে আমি বড় করেছি, মানুষ করেছি, যতদুর পড়তে চেয়েছে পড়িয়েছি, ওর বিয়ে থা দিয়েছি, ও এখন নিজের মতো করে সংসার করছে। এখন আমরা ওর ফ্ল্যাটে গিয়ে ওদের সংসারে বোঝা হতে যাবো কেন? ছেলে আমার মানুষের মতো মানুষ হয়েছে, এটাই পরম প্রাপ্তি।

নিজেদের সিউড়ির ছোট বাড়িতে বেশ স্বচ্ছন্দ বোধ করেন অরূপ বাবু। নিজে খুব বেশী পড়াশুনা করতে পারেন নি বলে ছেলের পড়াশুনার ব্যাপারে খুব সচেতন ছিলেন। ছেলেও তৈরী হয়েছে চাবুকের মতো। সব ব্যাপারেই দারুণ স্মার্ট। যেবার উচ্চ মাধ্যমিকে জেলার মধ্যে প্রথম হলো, আর রাজ্যের মধ্যে চতুর্থ, সেবার সারা গ্রাম ভেঙে পড়েছিল ওদের বাড়িতে। ক্যামেরার জোরালো আলোর ঝলকানিতে ঝলসে উঠেছিলো অরূপ বাবু আর বকুলের মুখ। মিডিয়ার সামনে ইন্টারভিউ দিতে দিতে ওরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলো। অরূপবাবুর প্রচ্ছন্ন গর্ব ভরা মুখটা দেখে মনে খুব শান্তি পেয়েছিলো বকুল।

তারপর তো ছেলের বড় শহরে পাড়ি দেওয়া।

সেই যে বেরোলো একবার ঘর থেকে, আর সেভাবে ঘরে ফিরে আসে নি। ওই অতিথির মতো আসতো। তখন খুব মন খারাপ হতো বকুলের। কিন্তু অরূপবাবুই সেইসময় বুঝিয়েছেন বকুলকে- ছেলেকে ধরে রাখলে আমদের এতো দিনের স্বপ্ন সব ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে।

পড়াশুনা শেষ করার সাথে সাথে একদিনও বসতে হয় নি। নামী কর্পোরেট সংস্থায় সম্মাজনক পদে জয়েন করেছিলো অর্জুন। কিছুদিনের মধ্যেই গাড়ি, ফ্ল্যাট সব কিনে নিয়েছে।

ছেলের কথা বলতে গেলে দুজনেরই গর্বে বুক ভরে ওঠে।

বকুলের তো মনেহয় একটা মুখের বদলে চারটে মুখ হলে ভালো হতো। একবার শুরু করলে আর থামতেই চায় না। গ্রামের মানুষরা খুব মন দিয়ে শোনে গ্রামের ছেলের সফলতার কাহিনী। অরূপ বাবুর ছেলে তো তাদেরও ছেলে। গ্রামে সেইজন্য অরূপ বাবু আর বকুলকে সবাই সমীহ করে চলে।

সেই ছেলে এতোদিন পর গ্রামে আসছে পুজো কাটাতে। স্বভাবতই আনন্দে ভাসছে গোটা গ্রাম।

সকাল এগারোটা নাগাদ ঝাঁ চকচকে গাড়ি নিয়ে আসলো অরূপবাবু ও বকুলের ছেলে অর্জুন। সাথে আধুনিক সাজে সজ্জিতা তার আদরের বৌমা তানিয়া। গোগোল তো ছুটে গিয়ে ঠামিকে জড়িয়ে ধরলো। গ্রামের মানুষ সবাই দেখতে এসেছে তাদের গ্রামের ছেলেকে।

এতোদিন শহুরে সভ্যতায় অভ্যস্ত অর্জুন হাত নেড়ে কোনোরকমে হাই হ্যালো করে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল। গ্রামবাসীরা চলে যাবার পর তাদের আধুনিকা সুন্দরী বৌমা যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো।

নিজের মনেই বললো —ডিসগাস্টিং, কতো লোকের ভিড়, এসে যে একটু রেস্ট করবো তার উপায় নেই।

ওরা ঘরে ঢোকার পর থেকেই বকুল ব্যস্ত হয়ে পড়লো ওদের নিয়ে

সেদিনটা বিশ্রাম নিয়ে নবমীর সকালে অরূপ বাবু বললেন, চল মোহিত বাবুর সাথে একবার দেখা করে আসি। আজ উনি না থাকলে তুই কোনোদিন এই জায়গাটায় পৌঁছতে পারতিস না। কতো পরিশ্রম করেছেন উনি তোর পেছনে। যখনই কোনো সমস্যা নিয়ে তুই ওনার কাছে গেছিস, সাথে সাথে উনি সমাধান করে দিয়েছেন। অংক, ইংরেজি, বিজ্ঞান সব বিষয়ে উনি তোকে সাহায্য করতেন। এখন উনি খুব অসুস্থ। চল একবার দেখা করে আসি। বৌমা তুমি আর দাদুভাইও চলো। খুব খুশী হবেন উনি তোমাদের দেখলে।

তানিয়ার ইচ্ছে না থাকলেও শ্বশুরমশায়ের মুখের উপর কিছু বলতে পারলো না।

চলো চলো আর দেরী কোরো না, তাড়া দেন অরূপ বাবু।

ছেলে গাড়ি বের করছে দেখে অবাক হয়ে অরূপ বাবু বলেন —গাড়ি কি হবে রে? ওইটুকু রাস্তা তোরা হেঁটে যেতে পারবি না?

বাবার কথা শুনে অর্জুন বললো - তোমার বৌমা আর নাতিকে গোটা গ্রামটা ঘুরিয়ে নিয়ে আসি। এছাড়া আসার সময় বড়রাস্তার উপরে ঠাকুরগুলো দেখিয়ে আনবো তোমাদের। কোনোদিন তো ওখানকার ঠাকুর দেখো নি। এবছর যখন এসেছি তখন ওই ঠাকুরগুলো তোমাদের দেখিয়ে নিয়ে আসবো। কেমন বড়ো বড়ো সব প্যান্ডেল, নিজের চোখেই দেখবে তোমরা।

বেশ অস্বস্তি নিয়েই ছেলের গাড়িতে উঠে বসলেন অরূপবাবু আর বকুল। গোগোল তো এতো খোলামেলা জায়গা দেখে আনন্দে আত্মহারা । সারাক্ষণ বকমবকম করেই চলেছে। মাঝে মাঝে ওর মা একটু ধমক দিলেই ওর দুই বডিগার্ড মানে ওর ঠামি আর দাদাই তেড়ে আসছে।

বেশ মজা পাচ্ছে এতে গোগোল। গ্রামের রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বেরোতেই একটু এগোচ্ছে তো কেউ না কেউ দাঁড় করিয়ে অর্জুনের সাথে কথা বলার জন্য এগিয়ে আসছে।

বিরক্ত হয়ে তানিয়া বললো, এরকম করে চললে তো দশমী পেরিয়ে যাবে।

মা, তাহলে কি আমরা দশমী পর্যন্ত গাড়িতে থাকবো ওই বড় রাস্তার ঠাকুর দেখার জন্য? সহজ প্রশ্ন গোগোলের।

চুপ করো। দিনকে দিন একটা ফাজিল তৈরী হচ্ছো। পেছনে মুখ ঘুরিয়ে বললো তানিয়া।

পেছনের সিটে দাদাই আর ঠামির কাছে নিশ্চিন্তে বসে প্রাণখুলে হাসছে তাদের আদরের নাতি।

মোহিত স্যারের বাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ভেতরে যেতেই স্যারের বৌ ওনাকে বললেন — দেখো কে এসেছে, তোমার প্রিয় ছাত্র।

স্যার বিছানায় শুয়েই ওকে কাছে ডাকলেন। কোনো একসময়ের অতো গম্ভীর মানুষটি আজ অর্জুনের হাত দুটো ধরে খুব শান্ত স্বরে বললেন — তুমি এসেছো, খুব খুশি হয়েছি আমি। তোমাকে দেখার জন্য মনটা বড় ব্যকুল হতো। তোমার বাবার কাছে তোমার খবর শুনে খুব গর্ব বোধ করি, তুমি আমাদের গ্রামের ছেলে। তোমার মতো আরও কিছু ছেলেমেয়ে যদি এরকম সিরিয়াসলি পড়াশুনা করতো তাহলে আমাদের গ্রামের নাম সংবাদপত্রের শিরোনামে থাকতো।

অর্জুন যেন এটাই শুনতে চেয়েছিলো, স্যারের কথার মাঝেই ও নিজের সফলতার কথা স্যার কে বেশ ফলাও করে বললো তার সাথে যোগ দিলো তানিয়াও।

ওদের এইসব কথাবার্তা শুনে অরূপবাবু আর বকুল মাথা নিচু করে একটু দুরে সরে দাঁড়ালেন।

স্যার অর্জুনকে বললেন —এখন আর মনে জোর পাই না। কি জানি আর কোনও দিন আমি সুস্থ হবো কি না? আমার যে এখনও আরও অনেক কাজ বাকি, তোমার মতো আরো অনেক ছাত্র তৈরী করতে হবে। আমাদের গ্রামের নাম দেশের বাইরে ও ছড়িয়ে পড়বে। তুমি ও একটু চেষ্টা কোরো। নিজের গাঁ কে ভালোবেসে, সেখান থেকে যদি কোনো হীরে মানিকের সন্ধান করে দেশের সামনে তুলে ধরতে পারো, তাতে তোমারও মুখ উজ্জ্বল হবে বাবা। আর আমি জানি তুমি চেষ্টা করলেই সেটা পারবে।

মুখে একটু হাসির রেখা ফুটে উঠলো তানিয়ার। এইগ্রামে নাকি অর্জুনের মতো আরো মেধাবী ছেলে আছে। ওই এক পিস ই ছিল এই গ্রামে। যা অবস্থা দেখছি এখানে, পড়াশুনা করার থেকে কি করে সহজে পয়সা রোজগার করা যায় তাতেই মন সবার।

মোহিত স্যারের সাথে দেখা করার পর ওরা গ্রামের রাস্তায় ঘুরে ঘুরে উঠলো শহরের বড় রাস্তায়। ভিড়ভাট্টায় গাড়ি আর এগোতে চায় না। এখানকার সবচেয়ে নামকরা অগ্রণী ক্লাবের পুজো দেখতে কাতারে কাতারে মানুষ চলেছে পুজো প্যান্ডেলের দিকে। অনেক দুরে গাড়ি দাঁড় করিয়ে হেঁটে ঢুকতে হবে পুজো প্যান্ডেলের মধ্যে।

আশ্বিনের প্রথম দিকে পুজো পরাতে বেশ গরম এবছর। হেঁটে পুজো প্যান্ডেল অবধি যেতে যেতে গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা ওদের। একে চিঁড়েচ্যাপ্টা ভিড় তার উপর এই অসহ্য গরম। কোনোরকমে ঠাকুর দেখে বেরিয়ে গোগোল জল খাবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লো। অর্জুন বললো, —তোমার আস্তে আস্তে আসো। আমি গোগোল কে নিয়ে গাড়ির কাছে যাচ্ছি।

রাস্তার দুপাশে অসংখ্য খাবারের স্টল। নানারকম খেলনা, বেলুন, আইসক্রিম, ফুচকা, চাট, এগরোল, আরো অনেক খাবারের দোকান। একটা বড় দোকান থেকে কোল্ড-ড্রিঙ্কস্ কিনে অর্জুন এগিয়ে চললো গোগোলকে নিয়ে।

গোগোলের এই এক সমস্যা, কখনও কোল্ড-ড্রিঙ্কস্ খাওয়ার জন্য সাংঘাতিক বায়না করে আবার এখন কিছুতেই খেলো না।

হটাৎ গোগোলের চোখে পড়লো রাস্তার একেবারে শেষ প্রান্তে ডাব বিক্রি করছে একটি ছোট ছেলে। তার সাথে তার মা ও আছে।

সাথে সাথে বায়না জুড়লো, —আমি ডাব খাবো।

অনিচ্ছাসত্ত্বেও অর্জুন ছেলের বায়না রাখতে ডাব কিনতে গেলো।

-এই ছেলে ডাব কতো করে?

-জোড়া আশি টাকা।

-মামদোবাজি পেয়েছিস? একটা ডাব চল্লিশ টাকা? দিনদুপুরে তো ডাকাতি করছিস?

পাশ থেকে ছেলেটির মা নরম সুরে বললো, —কি করবো দাদা? জিনিসপত্রের সব আগুন দাম। আমরা কি করে কিনবো বলুন?

অর্জুন উত্তেজিত স্বরে বললো —তাই বলে মানুষের গলা কেটে দাম নেবে নাকি? যা খুশি একটা দাম চাইলেই হলো?

ওদের কথাবার্তার মধ্যেই ওখানে এসে পড়ে তানিয়া, বকুল আর অরূপবাবু।

অর্জুনের এতো উত্তেজিত স্বরে ওদের সাথে কথা বলতে দেখে তানিয়া ছেলেকে টানতে টানতে নিয়ে যেতে চাইলো।

হটাৎ ছেলেটির মা অরূপ বাবুকে দেখে অবাক চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো —ও কাকু তুমি তো আমার গাঁয়ের লোক, আমি কি অনেক বেশী দাম চেয়েছি? আমরা কতো দুর থেকে মায়ে বেটায় এসে বসেছি দুটো পয়সা রোজগারের আশায়। এটুকু দাম আমরা নেবো না বলো?

এতোক্ষনে অরূপবাবু ভালো করে তাকিয়ে দেখলেন এতো আমাদের গ্রামের পঞ্চার বৌ। বছরকয়েক আগে মাত্র দুদিনের জ্বরে কোনো চিকিৎসার সুযোগ না দিয়েই পঞ্চা চলে গেল একেবারে না ফেরার দেশে। বৌ, দুই ছেলে আর বৃদ্ধা মা পড়লো অথৈ জলে। দিন আনি দিন খাই সংসারে শুরু হলো শাশুড়ি বৌ এর কঠিন সংগ্রাম। অনেকদিন ওরা গাঁ ছাড়া। শুনেছি মেলায় মেলায় ঘুরে আচার, বড়ি এইসব বিক্রি করে।

আজ যে এইভাবে ওদের সাথে দেখা হবে বুঝে উঠতে পারেন নি অরূপবাবু ও বকুল।

ছেলে ও বৌমার ব্যবহারে যথেষ্ট লজ্জিত তারা । ওনারা ভাবতেই পারছেন না যে ছেলে হাজার হাজার টাকা খরচ করে রেস্টুরেন্টের পেছনে, সে সামান্য ডাবের জন্য এতো দরদাম করছে। নিজেকে খুব ছোট মনে হতে লাগলো অরূপবাবুর।

এ কি শিক্ষা দিয়ে মানুষ করেছেন উনি। মোহিত স্যারের সাথেও কথা বলার সময় উনি লক্ষ্য করেছিলেন ছেলে নিজের সফলতার কথা বলতেই ব্যস্ত। স্যারের শরীর সম্পর্কে জানতে আগ্রহী নয় মোটেই।

বড্ড ভুল হয়ে গেছে গ্রামের সহজ সরল মানুষগুলোর মাঝে ওদেরকে ডেকে এনে।

নিজেকে যেন অনেকটা নীচে নামিয়ে আনলেন তিনি।

অরূপবাবুর চিন্তার মাঝেই ছেদ টানে গোগোল।

বলতে থাকে —দেখো দাদাই, একটু আগেই তো বাবা কোল্ড-ড্রিঙ্কস্ কিনলো, কই ওখানে তো একপয়সাও দাম কমালো না, যা বিল দিলো সেইটাই তো পুরো দিয়ে দিলো আর এখানে এই দাদাটা আর কাকিমা কে কিছুতেই পয়সা দিতে চাইছে না।

তানিয়া আর অর্জুনের রক্তচক্ষু একসাথে নিক্ষিপ্ত হলো গোগোলের উপর।

নীচুস্বরে বললেও তানিয়া - অর্জুনের কথাগুলো কানে গেলো বকুলের। গোগোলকে নাকি ওরা ব্যাড ম্যানার্স শেখাচ্ছে। ওদের কাছে বেশীদিন থাকলে গোগোল নষ্ট হয়ে যাবে। বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো বকুলের।

এই কথাবার্তার মাঝেই ছোট ছেলেটি একটা ডাব নিয়ে কাটতে শুরু করলো। তারপর স্ট্র দিয়ে গোগোলের হাতে ধরিয়ে দিলো।

গোগোল মহানন্দে হাত বাড়াতেই অর্জুন চল্লিশ টাকা বের করে ছেলেটির মায়ের হাতে দিতে গেলো।

শুকনো মুখে হাসি ফুটিয়ে বৌটি বললো, —আমাদের গ্রামের ছেলেকে তো আমি আর কিছু দিতে পারবো না, তাই এই ডাবটাই দিয়ে ওর একটু তেষ্টা মেটালাম। আমাকে ডাবের পয়সা দিয়ে আর লজ্জা দেবেন না দাদাভাই।

আমি সত্যিই বুঝতে পারি নি, তুমি যে অরূপ কাকুর ছেলে।

সপাটে চড়টা এসে পড়লো যেন অরূপবাবুর গালে।এতোদিনের এতো প্রতীক্ষা, ছেলে ঘরে ফিরে আসার বিপুল আনন্দ, সর্বোপরি ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করার পাহাড় প্রমাণ আনন্দগুলো একমুহুর্তে চিড়তার মতো বিষতেতো হয়ে গেলো।

ঘরে ফিরে এসে ছেলেকে বললেন, মনেহয় 'গ্রাম দেখা আর গ্রামকে দেখানো' এ দুটো কাজই তোমার হয়ে গেছে। এবার মনেহয় তোমাদের ঝলমলে দুনিয়ায় ফিরে যাওয়া উচিত। আমি জীবিত থাকাকালীন তুমি আর গাঁয়ে ফিরে এসো না।

সারা রাত নিজের সাথে অনেক যুদ্ধ করলেন অরূপবাবু। কিন্তু তাঁর কাছে তাঁর গ্রামের মানুষজনই বেশি আপন মনে হলো।

নাতিটার জন্য বুকটা একেবারে ফেটে যাচ্ছে।কিন্তু তিনি বকুলের মুখ থেকে সব কিছু শোনার পর বুঝতে পেরেছেন, নাতিকে আর কাছে পাবেন না।

তাই বুকে পাথর বেঁধে ওদের রওনা করিয়ে দিলেন। গ্রামের সবাই বোঝার আগেই সরিয়ে দিলেন তিনি গ্রামের গর্ব কে। কিন্তু তার মধ্যেও মনে আবার জেগে উঠেছে আশার আলো। তার নতুন স্বপ্ন – গোগোল।

মা দুর্গার উদ্দেশ্যে কপালে হাত ঠেকালেন, মনে মনে বললেন —এবার আমার স্বপ্ন পূরণ কোরো মা তুমি- আমার দাদুভাই যেন সত্যিকারের একজন মানুষ হয়।

সকালে ওদের গাড়িটা যখন রাস্তার মোড় পেরিয়ে এগিয়ে গেলো, মন্ডপে তখন বিসর্জনের বাজনা।

অরূপবাবুর মনে বিষাদের কালো মেঘের মধ্যেও উঁকি দিচ্ছে সূর্যের নরম আলো।

 
 
 

Comments


bottom of page