নববর্ষ
- NM84 Members
- Apr 15, 2021
- 2 min read
শুভ্রা সরকার
নববর্ষ কথাটা বাঙালির মনে বেশ শিহরণ জাগায়। সেই ছোট বয়স থেকেই দেখে আসছি নববর্ষের দিনটা বেশ অন্যরকম ভাবে পালিত হয়। সব গ্লানি সব মালিন্য যেন মুছে যায়। অবশ্যই মানসিকভাবে। সত্যি কি তাই হয়! তবুও মনে হয় সকালটা যেন বড় নির্মল। আসলে মানসিক প্রস্তুতি এর বড় কারন। কদিন আগে থাকতেই ঘরদোর পরিষ্কার করা, পর্দা, বিছানা বেশ ফটফটে পরিষ্কার, আর সেলের দৌলতে বেশকিছু নতুন জিনিষের আমদানী! ভাবায়, না সত্যিই ঘরটা বেশ অন্যরকম। আর ঘরের মানুষগুলো! তারাও সেদিন বেশি বেশি ভালো। বকাঝকা থাকেনা, খাবার-দাবারের আয়োজনটাও একটু বেশি ভালো! স্নান সেরে ঠাকুর আর বড়দের প্রণামের পর নিজেরও মনে হয় আজ যেন একটু ভালো মানুষ হয়ে গেছি। নতুন জামা কাপড়ের দৌলতে ঘরে-বাইরের, সেই সাথে নিজেকেও বেশ সুন্দর লাগে। সব মানুষই যেন একটু অন্যরকম। কেউ ঝগড়াঝাঁটির দিকে ঘেঁষতে চায় না। তা এইরকম দিন তো সকলেরই কাম্য। মা বলতেন আজ যেমন যেমন কাজ করবে গোটা বছরটাই সেরকম যাবে। ছোটবেলায় বিশ্বাস করতাম। বড় হবার সাথে সাথে বিশ্বাসটা ফিকে হলেও, দিনটাকে স্পেশাল ভাবায় ভাটা পড়েনি। আসলে একঘেয়েমির হাত থেকে মুক্তি পেতে ভালই লাগে।
এখনকার নববর্ষ একটু বেশি জৌলুসের সাথে পালিত হলেও ছোটবেলায় নববর্ষ পালন হত আন্তরিকতার সাথে। খুব ছোট্টবেলায় একবার মামাবাড়িতে নববর্ষ যেভাবে পালন হতে দেখেছিলাম, আজ বয়সের অনেকটা বেলা গড়ালেও সেই স্মৃতি একটুও ফিকে হয়নি। তখন আমার দাদা মশাই ছিলেন না। খুব সকালে সবাই স্নান সেরে ঠাকুর প্রণাম ও পূজা সমাপনান্তে ঘরের সামনের প্রকাণ্ড লিচু গাছের তলায় জড়ো হয়েছিলাম। একটা বড় কাঠের চেয়ারে দিদিমা বসেছিলেন। তার পাশে চার মামা, মামী রা, মা আর মাসি দাঁড়িয়ে। আমরা ছোটরা সামনের শতরঞ্চিতে বসে। একটা বড় কাঠের পরাতে নাড়ুর পাহাড়, আর অন্য একটি পরাতে গুচ্ছের গুড়ের বাতাসা এনে সামনে রাখা ছিল। এরপর বড় মামা মামিকে নিয়ে দিদা কে প্রণাম করে আশীর্বাদ নিলেন। দিদিমা নাড়ু বাতাসা হাতে দিলেন। এভাবে সব মামা মামি মা মাসির পালা শেষ হলো। এরপর ছোটদের পালা। সবাইকে প্রণাম করতে করতে (এমন কি দু দিনের বড় হলে তাকেও) হাঁপিয়ে পড়লেও নাড়ু আর বাতাসার একটা ছোট্ট টিলা সংগ্রহ হওয়ায় ছোটরা একটু বেশী খুশী হতাম। আমার বোন, যার সাথে আড়ি-ভাব বেশি হতো, সেদিন সেই সুযোগে তারও একটা প্রণাম পেতাম। তার হাতে যখন পরাত থেকে নাড়ু আর বাতাসা দিতাম, এক লাফে অনেক বড় হয়ে যেতাম। খুব মামুলী ঘটনা হয়তো, কিন্তু এই ছোট্ট জিনিস গুলো অনেক মূল্যবোধ শেখাতো। শেখাতো বড়দের সাথে শ্রদ্ধার সম্পর্ক আর ছোটদের সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক। আসলে সম্পর্কের বীজগুলো এমনভাবে বপন হয়ে যেত যে আমরা টের ও পেতাম না।
এখন বাংলার বাইরে থাকলেও আনন্দে কোন ভাঁটা পড়েনি। সব বাঙালিরা সকালে নয়তো সন্ধ্যায় কালীমন্দিরে জড় হই। লাইন দিয়ে পুজোর পর আবার আর একটা লাইনে দাঁড়িয়ে মিষ্টিমুখ আর শুভেচ্ছা বিতরণ ও গ্রহণ। মনে হয় যেন একটা বড় পরিবারে আছি। আর একটা জিনিস যেটা না বললেই নয়, বাংলার বাইরে থাকার দরুন অন্য প্রদেশের নববর্ষকেও কাছ থেকে দেখেছি। উদ্দীপনা উৎসাহ সবারই একরকম। তাদের নববর্ষে আমরা আর আমাদের নববর্ষে তারা অংশগ্রহণ করি বা করেন। খুব, খুব ভালো লাগে। সেই ছোটবেলার একটা গান, যেটা আমরা সবাই গেয়েছি, মনে পড়ে আর মনে হয় এখানেই গানটার সার্থকতা। “নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান”। আসলে এই ভাবেই আমরা আমাদের জীবনকে লেখাপড়া বা শিক্ষার সাথে মিলিয়ে নিতে পারি। মিলিয়ে নিতে পারি বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও রীতি গুলোকে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে। শুভ নববর্ষে সব বড়দের প্রণাম, ছোটদের ভালোবাসা আর সতীর্থ বন্ধু-বান্ধবদের অনেক শুভেচ্ছা আর অফুরন্ত ভালোবাসা জানিয়ে লেখায় ইতি টানলাম।

Comments