top of page

বৈশাখ

মধুমিতা চক্রবর্তী


১লা বৈশাখ, রোজ সকালের মতন মা সকাল সকাল স্নান পুজো সেরে মন্দিরের উপাসনা তে যাওয়ার জন্য তৈরী। উপাসনা মানে খালি মন্দিরের পুজো না, ওটা ছিল সব গুরু ভাই বোন দের সাথে দেখা হওয়ার জায়গা। বয়েস কালে একা থাকে, খুব একটা বেরোনো হয়না, তাই মন্দিরে যাওয়া মানে একটা ছোট রিউনিয়ন। সবার সাথে দেখা হওয়া, কথা বলা, কিছুটা ভালোলাগা।

পয়লা বৈশাখ এও একই রকম। বাবা নতুন সাদা পাজামা পাঞ্জাবি পরে রেডি। সবাই মিলে অটো করে যাবে। অটো তে যাওয়ার একটা আলাদাই মজা। সবাই কে নিজের নিজের ঘর থেকে তোলা হতো তারপর একসঙ্গে গল্প করতে করতে যাওয়া হতো। ওটার মধ্যেই একটা আনন্দ ছিল।

উপাসনা শেষ হয়ে যাওয়ার পর থাকতো প্রসাদ বিতরণ। পয়লা বৈশাখে স্পেশাল প্রসাদ এক্সট্রা করে একটা লাড্ডু। এবার সব শেষে কি মনে হলো অটো তে ওঠার সময় বাবা বললো একটু সামনের মিষ্টির দোকানে দাড়াস, আজকে সবাইকে খাওয়াবো। অটো তে বসা বাকিরা বলে উঠলো, দাদা আজ থাক। অন্য একদিন খাওয়াবেন। বাবা তখন একদম ফিল্মি স্টাইলে বললো, জো কাল কারে সো আজ, জো আজ কারে, সো আভি! কাল টাল কিছু না। ক্যা পাতা কাল হো না হো!

মিষ্টির দোকানে এসে ফরমায়েশ দেওয়া হলো। গরম গরম কচুরি, জিলিপি আর রসগোল্লা। সব বসে খাওয়া দাওয়া হলো। তারপর যে যার বাড়িতে।

রাত থেকে বাবা বলছে আমরা শরীর টা ভালো লাগছে না। কেমন অস্হির করছে। ভোর হতেই কেমন কথা জড়িয়ে গেল। ভোর বেলায় ল্যান্ড ফোনের বিকট আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল! ধড়পড় করে উঠে ভাবলাম কি হলো? কোন খারাপ খবর নয়তো!

ফোন ধরতেই একটা ম্লান আওয়াজ শোনা গেল.... শরীরটা খুব খারাপ লাগছে তারাতারি চলে আয়।

তারপর যাওয়াতে একটা দুঃখর সংবাদ পাওয়া গেলো।

চারিদিকে লোকজনের ভিড়। সবার মুখে একটাই কথা এই তো কালকেই আমাদের খাওয়ালেন আজকে চলে গেলেন। ওনার ওই কথা টা কানে বাজছে, ক্যা পাতা কাল হো না হো!

বাবা স্কাউট মাস্টার ছিল। সব ছাত্র ছাত্রী দের উৎসাহতে শেষেও একটা ভালো কাজ করে গেল। নিজের দুটো চোখ দান করে গেল। ওই চোখ দিয়ে আরো দুজন নতুন দৃষ্টি পাবে।

নতুন বছরে আমরা সবাই নতুন আশা নিয়ে এগোই তার মধ্যেও কিছু ঘটনা আমরা প্রেডিক্ট করতে পারি না।

নববর্ষে সবাই নতুন আশা, আনন্দে এগিয়ে চলুক।

শুভ নববর্ষ র অনেক শুভেচ্ছা।



 
 
 

留言


bottom of page